কলকাতা 

Exclusive Interview Dr Nazrul Islam on Bengal Politics: নওশাদ সিদ্দিকীর গ্রেফতারি, সাগরদিঘী বিধানসভার উপনির্বাচনের ফল এবং শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির নেপথ্যে কোন বড় মাথা তা নিয়ে বাংলার জনরবে বিস্ফোরক প্রাক্তন পুলিশ কর্তা ডঃ নজরুল ইসলাম, বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন

শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

মুর্শিদাবাদের ভূমিপুত্র। স্বাধীনতার পর বাঙালি মুসলিম সমাজের প্রথম আইপিএস ড. নজরুল ইসলাম। পুলিশকর্তা হিসেবে একজন সত্যিকার অর্থে ন্যায় পরায়ণ এবং মজলুম মানুষকে ইনসাফ দেওয়ার চেষ্টা করে গেছেন তার চাকরি জীবনে। শাসকের রক্ত চক্ষুকে উপেক্ষা করে কালোকে কালো সাদাকে সাদা বলেছেন আইপিএস হিসেবে কর্মরত থাকাকালীন সময়ে। সেই জন্যই হয়তো যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও পুলিশ কমিশনার কিংবা ডিজিপি হতে পারেননি। কিন্তু এই বাংলার সাধারণ মানুষের হৃদয়ে ডঃ নজরুল ইসলাম গেঁথে রয়েছেন। তাঁর কর্মজীবনে মজলুম মানুষের প্রতি তিনি যে ন্যায়পরায়ণতা দেখিয়ে গেছেন তা ইতিহাস হয়ে রয়েছে। চাকরির জীবন থেকে অবসর নেওয়ার পর সাধারণ মানুষের কথাকে মানুষের স্বার্থে তিনি শাসকের বিরুদ্ধে কখনো কলম ধরেছেন কখনো সরাসরি আক্রমণ করেছেন।

এই নজরুল ইসলাম বাংলার জনরবকে এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে বিতর্কিত এবং চাঞ্চল্যকর মন্তব্যটি করেছেন। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সাগরদিঘি বিধানসভার উপনির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস বিপুল ভোটের ব্যবধানে হেরে গেছে। একইসঙ্গে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির জন্য প্রাক্তন পুলিশ কর্তা নজরুল ইসলাম সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী থেকে আঙুল তুলেছেন। কেন তিনি এই ধরনের কথা বলছেন। মন্ত্রিসভার একজন দুর্নীতিগ্রস্ত হলে কিভাবে মুখ্যমন্ত্রীকে দায়ী করা যায় তা নিয়ে যুক্তি নির্ভর ব্যাখ্যা দিয়েছেন ড. নজরুল ইসলাম।

Advertisement

এই প্রেক্ষাপটে আমরা নজরুল ইসলামের অভিমত জানতে চেয়েছিলাম।

সাগরদিঘি বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে আপনার প্রতিক্রিয়া ?

নজরুল: এই রাজ্যের তৃণমূল কংগ্রেসের কমিটেড ভোটব্যাঙ্ক হলো বাঙালি মুসলিমরা। বিজেপির CAA ও NRC এর ভয় দেখিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনে বাঙালি মুসলিমদের সব ভোট নিজের দখলে নিয়েছিলেন। বিধানসভা নির্বাচনে বিপুল ভোটে তিনি জয়যুক্ত হয়েছিলেন কিন্তু সাগরদিঘি বিধানসভার ফলাফল একথা প্রমাণ করছে এই রাজ্যের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কমিটেড ভোটব্যাঙ্ক বাঙালি মুসলিমরা মমতার প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করছে।

আপনার কী মনে হয় সাগরদিঘির পর রাজ্যের সর্বত্রই বাঙালি মুসলিমরা কি মমতার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে ?

নজরুল : এখনই বলা যাবে না যে সব জায়গায় মুসলিমরা মমতার কাছ থেকে সরে যাবে। তবে এ কথা ঠিক সাগরদিঘি বিধানসভার উপনির্বাচনের এই ফলাফল এই রাজ্যের মুসলিমদের উপরে পড়বে তবে কতটা পড়বে তা বলার মত সময় এখন হয়নি। এ কথা ঠিক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কমিটেড ভোট সরে যাচ্ছে এই প্রবণতা যদি বজায় থাকে তাহলে আগামী পঞ্চায়েত নয়, লোকসভা নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভালো ফল করতে এখানে পারবে না। কারণ এ কথা মানতেই হবে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মূল শক্তি হলো এই রাজ্যের বাঙালি মুসলিম ভোট। আমরা দেখেছিলাম ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনে সাগরদিঘি বিধানসভা কেন্দ্র থেকে প্রয়াত বিধায়ক সুব্রত সাহা পঞ্চাশ হাজারের বেশি ভোটে জিতে ছিলেন এবার ২৩ হাজার ভোটে হেরে গেল তৃনমূল। তার মানে অবশ্যই প্রভাব পড়ছে। আর সাগরদিঘির মত সর্বস্তরে যদি প্রভাব পড়ে তাহলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নবান্নে ক্ষমতায় থাকতে পারবেন না।

আপনার কি মনে হয় নওশাদ সিদ্দিকীর গ্রেফতারিতে এই রাজ্যের বাঙালি মুসলিম ভোট ব্যাংকে প্রভাব পড়েছে?

নজরুল: একথা অস্বীকার করা যাবে না ফুরফুরার শরীফের প্রভাব এ রাজ্যের সর্বত্রই আছে। সেই পরিবারের একজন সন্তানকে রাজনীতি করার কারণে যেভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং কলকাতা হাইকোর্টে রাজ্য পুলিশ প্রমাণ দেখাতে পারেনি তার গ্রেফতারের মূল কারণটা কি ছিল? স্বাভাবিকভাবে শুধু রাজ্যে নয়, নওশাদ সিদ্দিকীর গ্রেফতারের প্রভাব আন্তর্জাতিক মহলেও পড়েছে । আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বাংলাদেশের মানুষ খুব সম্মান করতেন শ্রদ্ধা করতেন সেই জায়গাটা উনি হারিয়েছেন নওশাদ সিদ্দিকীকে গ্রেফতার করার মধ্য দিয়ে। অন্যায় করলে গ্রেফতার করা যায়, এটা ঠিকই। কিন্তু একই সঙ্গে এটাও মানতে হবে তার গ্রেফতারির যে কারণ তা প্রমাণ করতে পারেনি কলকাতা হাইকোর্টে দাঁড়িয়ে রাজ্য সরকারের আইনজীবী সেজন্যেই তাকে জামিন দিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর প্রভাব শুধু বাঙালি মুসলিমদের উপর পড়েছে তা নয়, এই রাজ্যের সচেতন নাগরিকদের উপর প্রভাব পড়েছে বলে আমি মনে করি।

সম্প্রতি একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের অনুষ্ঠানে আপনি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির জন্য দায়ী করেছেন ? কেন করেছেন?

নজরুল : সংবিধানের ১৬৪ (২) ধারা অনুসারে মন্ত্রিসভার দায়িত্ব যৌথ। কাজেই শিক্ষামন্ত্রী হিসাবে পার্থ চট্টোপাধ্যায় যে অপরাধ করেছেন সেই অপরাধের দায় মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এড়াতে পারেন না। পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে সমর্থন করে এক মন্ত্রী বলেছিলেন যে, পার্থ চট্টোপাধ্যায় কোন অপরাধ করে থাকলে তার দায় আমাদের সকলের। মন্ত্রিসভার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই সকলের মধ্যে আছেন। কাজেই রাজ্যের সেই মন্ত্রীর মত অনুসারে পার্থর অপরাধে মমতা অপরাধী।

(এই সাক্ষাৎকারের বক্তব্য পুরোপুরি নজরুল ইসলামের নিজস্ব মতামত ভারতীয় সংবিধানের ১৯ নম্বর ধারায় মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে গুরুত্ব দিয়ে আমরা তা প্রকাশ করছি মাত্র। এই মতামতের জন্য কোনভাবেই বাংলার জনরব কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়।)


শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সম্পর্কিত নিবন্ধ